গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫
সম্মানিত পাঠক আপনি হয়তো গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫, মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা ২০২৫, মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা, গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম, গর্ভবতী ভাতা কবে দিবে ২০২৫ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
কেননা আজকে আমরা উপরোক্ত সকল টপিক সহ আরও আলোচনা করব গর্ভবতী ভাতা কত টাকা ২০২৫, মাতৃত্বকালীন ভাতা চেক ২০২৫ সম্পর্কে। আপনি যদি গর্ভবতী ভাতা নিতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
বাংলাদেশ সরকার দরিদ্রতা দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল গর্ভবতী মায়েদের সরকারিভাবে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে, যাতে গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়-ই সুস্থ থাকতে পারে।
গর্ভবতী ভাতা পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে এবং ভাতা পেতে হলে আপনাকে আবেদন করার প্রক্রিয়া জানতে হবে। এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি সহজেই গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন বেকার ভাতা অনলাইন আবেদন বাংলাদেশ
তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা পেয়ে নিজের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারবেন, এছাড়া অন্যান্য জরুরত মেটাতে পারবেন। প্রচারণ আর বেশি কথা না বেরিয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত এবং নীতিমালা রয়েছে। এ সকল শর্ত পূরণ হলে আপনি গর্ভাবস্থায় ভাতা পাবেন। এ সকল শর্ত যদি পূরণ না হয় তাহলে আপনাকে ভাতা কার্ড প্রদান করা হবে না। তাই আগে দেখে নিন মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা ও শর্তাবলী গুলো:
- গর্ভবতী মহিলার অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই ২০ বছর বা তার বেশি বয়সের হতে হবে।
- গর্ভবতী মহিলার পরিবার দরিদ্র হতে হবে। মাসিক ইনকাম ১৫০০০ টাকা এর কম হতে হবে।
- আগে প্রথম এবং দ্বিতীয় গর্ভধারণকালে আবেদন করা যেত, কিন্তু বর্তমানে যে কোনও একবার করা যাবে। তৃতীয় গর্ভধারণ কালে আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- অতিরিক্ত দরিদ্র এবং প্রতিবন্ধী মহিলাদের ভাতা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।
- যে মহিলা আবেদন করবেন সেই মহিলা কে অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে এবং নির্দিষ্ট ভাবে জুলাই মাসেও গর্ভবতী অবস্থায় থাকতে হবে।
- যিনি আবেদন করবেন তার অবশ্যই সক্রিয় কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে যাতে ভাতার টাকা জমা হতে পারে। সেই ব্যাংকে অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা থাকলে আরও ভালো হয়। বিশেষ করে বিকাশ, নগদ অথবা রকেট অ্যাকাউন্ট থাকলেও হবে।
- আবেদনকারীর নিজের বসতভিটা আছে অথবা অন্যের জমিতে বা বাড়িতে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রেও আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদনের যোগ্য হবেন।
- নিজের পরিবারের কোনও চাষ করার মতো জমি অথবা মাছ চাষ করার মতো পুকুর নেই, এমন গর্ভবতী মহিলা আবেদন করতে পারবেন।
- শুধুমাত্র ৪ থেকে ৬ মাসের গর্ভবতীরা আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ ৪ মাসের কম অথবা ৬ মাসের বেশি হলে আবেদন করতে পারবেন না।
- গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই তার নিজ ইউনিয়ন থেকে আবেদন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মহিলা পিতার বাড়ির এলাকার ভোটার কিন্তু শশুড় বাড়ির এলাকা থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করেন। সে ক্ষেত্রে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
- উপরের শর্তগুলো পূরণ হলে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পাবেন।
গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫
গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫ সম্পর্কে অনেকেই খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যদি আপনি না জানেন তাহলে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
কেননা এখন আমরা গর্ভবতী ভাতার জন্য অনলাইনে কিভাবে আবেদন করতে হয় সেই পদ্ধতি খুব সহজে আপনাকে জানিয়ে দিব। আমাদের এই আর্টিকেলটি দেখে দেখে আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। নিচে এ সম্পর্কে ধাপে ধাপে বিস্তারিত বলা হলো।
ধাপ ১: প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
- টিকা গ্রহণের (ANC) কার্ড।
- অনেক সময় আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট প্রয়োজন হয়।
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার যেখানে বিকাশ, নগদ অথবা রকেট অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
ধাপ ২: গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম
গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ফরমটি আপনি অনলাইনে পেয়ে যাবেন। আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও ফরম পূরণ করতে পারবেন। যদি না পারেন তাহলে যে কোনও কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ফরম পূরণ করে নিতে পারবেন।
তারপর প্রিন্ট করে বের করে নিবেন। নিজে নিজে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করতে চাইলে কোনও ব্রাউজারে গিয়ে "গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম" লিখে সার্চ দিন। তারপর প্রথম ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করুন সেখানে আবেদন ফরম খুঁজে বের করে পূরণ করুন এবং সাবমিট করুন।
এছাড়া এই লিঙ্কে ক্লিক করে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবেন। লিংকে ক্লিক করলে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে, সেখানে ফরমের পিডিএফ পেয়ে যাবেন। আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে ছবি দেওয়া হলো।
ছবি
অনেক সময় সার্ভার এর সমস্যার কারণে অনলাইনে আবেদন করা মুশকিল হয়ে থাকে। এজন্য আপনি ফরম নিয়ে সরাসরি চেয়ারম্যানের বা মেমবারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আপনি ইউনিয়ন পরিষদ অথবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় অথবা উপজেলা তথ্য কেন্দ্রে তথ্য আপার কাছে ফরম জমা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ৩: গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫
সাধারণত প্রত্যেক মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে অনলাইনে অথবা সরাসরি অফিসে গিয়ে আবেদন করা যায়। গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন করতে কোনরকম টাকা পয়সা খরচ করতে হয় না, এটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে করা যায়।
তাই যদি কেউ টাকা চেয়ে থাকে তাহলে তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। তবে আপনি যদি কম্পিউটার দোকানে গিয়ে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে চান তাহলে কম্পিউটার দোকানদারকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু টাকা দিতে হবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী। এভাবে আপনি খুব সহজেই গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে পারবেন।
গর্ভবতী ভাতা কবে দিবে ২০২৫
গর্ভবতী ভাতা কবে দিবে সে সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। গর্ভবতী ভাতা সাধারণত তিন মাস পর পর ২৪০০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছয় মাস পর পর ৪৮০০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।
আমরা জানতে পেরেছি ২০২৫ সালের প্রথম মাসের ৬ তারিখ থেকে দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হয়েছে। সে হিসাবে ২০২৫ সালের মে মাসে এবং জুন মাসে গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হতে পারে।
এছাড়া অনেকেই আছেন যারা ২০২৩-২৪ সালে আবেদন করেছেন, তারা কোনও কোনও সময় গর্ভবতী ভাতা পেয়েছেন কিন্তু পরবর্তীতে আর পাননি, তারা প্রথমে দেখুন আপনার যে বিকাশ, নগদ অথবা রকেট অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেটি সচল রয়েছে কিনা।
আরও পড়ুন কিভাবে ফরসেজ থেকে ইনকাম করা যায়
যদি সচল না থাকে তাহলে সেটি ঠিক করে আপনার ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করতে হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে পুনরায় টাকা পাওয়ার জন্য।
মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা ২০২৫
মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা দেখতে হলে আপনাকে আপনার ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। অনলাইনে যে কোনও ব্রাউজারে গিয়ে আপনার ইউনিয়ন পরিষদের নাম লিখে সার্চ করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সুবিধা ভোগীদের তালিকা বা মাতৃত্বকালীন ভাতা নামের অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন।
তারপর আপনার সামনে pdf ফাইল চলে আসবে, সেই pdf ফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। সেখানেই মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা অর্থাৎ যারা যারা ভাতা পাচ্ছেন বা পাবেন তাদের নাম অথবা কোনও কোড দেওয়া থাকবে।
FAQ: গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১. তৃতীয় সন্তানের জন্য ভাতা পাওয়া যাবে কি?
উত্তর: তৃতীয়বার গর্ভধারণকালে ভাতা পাওয়া যাবে না, কেবলমাত্র প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে ভাতা প্রদান করা হয়।
২. গর্ভবতী ভাতার জন্য কখন আবেদন করতে হবে?
উত্তর: গর্ভাবস্থার বয়স যখন চার মাস পার হবে তখন আপনি ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং ছয় মাসের আগে আপনাকে অবশ্যই আবেদন করে ফেলতে হবে। তবে তৃতীয় সন্তানের জন্য গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
৩. আবেদন করলেই কি ভাতা পাওয়া যায়?
উত্তর: না। নির্দিষ্ট সংখ্যক গর্ভবতী মহিলাদেরকে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। স্থানীয় কমিটি বাজেট এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর বিবেচনা করে গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র পরিবার রয়েছে যেখানে গর্ভবতী মহিলাদের ভালোভাবে সেবা যত্ন করা হয় না। এজন্য বাংলাদেশ সরকার গর্ভবতী মহিলাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছে। অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন করা অনেক সহজ। আপনি যদি কোনও পরিশ্রম করতে না চান তাহলে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ফরম পূরণ করুন।
তারপর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ফরম জমা দিন। সম্মানিত পাঠক আশা করি আপনি গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫, গর্ভবতী ভাতা কবে দিবে ২০২৫, মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা ইফতারি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে নিচে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url